সাইলেজ কি

বায়ুশূন্য অবস্থায় সবুজ ঘাসকে ভবিষ্যতের জন্য প্রক্রিয়াজাত করে রাখার পদ্ধতিকে সাইলেজ বলে। বর্ষা মৌসুমে সবুজ ঘাসে ময়েশ্চার বেশি থাকার কারণে শুকাতে সমস্যা হয়। আবার শুকানো হলে পুষ্টিমান কমে যায়। তাই সারা বছর সঠিক পুষ্টিমানসমৃদ্ধ ঘাস গরুকে খাওয়াতে সাইলেজ হচ্ছে একটি উত্তম প্রক্রিয়া।

বর্ষা মৌসুমে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায় দেশীয় ঘাস, যেমন—দূর্বা, বাকসা, আরাইল, সেচি, দল ইত্যাদি। এ ছাড়া গাছের পাতা, যেমন—ধঞ্চে, ইপিল-ইপিল এবং পাশাপাশি জমিতে চাষ করা নেপিয়ার, পাকচং, ভুট্টা, সুদান, পারা, সরগম ইত্যাদি খুব সহজে সাইলেজ করে সংরক্ষণ করা যায়।

সাইলেজ তৈরি করার জন্য ফুল আসার আগে একই পরিপক্বতার ঘাস কেটে নিতে হয়। সবুজ ঘাসের মধ্যে সবচেয়ে ভালো সাইলেজ হয় ভুট্টার।

কারণ এই সাইলেজে কাণ্ড, পাতার সঙ্গে ভুট্টাও থাকে, যার ফলে দানাদার খাদ্যের চাহিদাও অনেকাংশ পূরণ হয়। এ জন্য আধাকাঁচা ভুট্টা থাকার সময় সংগ্রহ করা ভালো। ঘাস কাটার পর সেগুলোকে এক দিন রোদে শুকিয়ে নিতে হয়, যেন ভেজাভাব না থাকে। তারপর ঘাসগুলো ১ থেকে ৩ ইঞ্চি পরিমাণ ছোট ছোট টুকরা করে কেটে নিতে হয়।

টুকরা করে কেটে নেওয়া শেষে ফার্মেন্টেশন বা গাঁজনপ্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করার জন্য চিনিজাতীয় উপাদান যুক্ত করতে হয়। এ কাজে লালিগুড় বা মোলাসেস ব্যবহার করা যেতে পারে। লাল চিনিও ব্যবহার করা যায়। সব শেষে সংরক্ষণের জন্য সিলো বা পাত্র ঠিক করতে হয়। এ জন্য প্লাস্টিক ব্যাগ বা বস্তা, ড্রাম ব্যবহার করা যায়।

মাটিতে পুঁতেও সংরক্ষণ করা যায়। মাটিতে পুঁতে সংরক্ষণের জন্য উঁচু স্থান নির্বাচন করতে হয়। প্রয়োজনীয় পরিমাণ গর্ত করে পলিথিন দিয়ে দিতে হয়।
সাইলেজ করে সংরক্ষণের ৪০ দিন পর বছরের যেকোনো সময় সংরক্ষিত ঘাস তুলে সরাসরি বা শুকনা খড়ের সঙ্গে মিশিয়ে গরুকে খাওয়ানো যায়। সাইলেজের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, সারা বছর গরুকে কম মূল্যে কাঁচা ঘাসের বিকল্প হিসেবে সরবরাহ করা যায়। কাঁচা ঘাস বা খড়ের পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি করা যায়। দীর্ঘদিন পুষ্টিমান অক্ষুণ্ন থাকে। সাইলেজ প্রক্রিয়ায় ঘাস ১২ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করে রাখা যায়।