পাথর কুচি পাতার উপকারিতা

প্রাচীনকাল থেকেই নানান রোগের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন ধরণের ঔষধি গাছ ব্যবহার হয়ে আসছে আর তার মধ্য পাথরকুচি হলো অন্যতম। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে পাথরকুচি পাতা কিডনি রোগসহ বিভিন্ন রোগের বিশেষ উপকারে আসে।

মূত্রনালির যে কোন সংক্রমণে, রক্তপিত্তে, পেট ফাঁপায়, শিশুদের পেট ব্যথায়, মৃগী রোগীদের পাথরকুচির রস খাওয়ানো হয়। মূত্র পাথর সারিয়ে দিতে সক্ষম পাথরকুচি। এ ছাড়া ব্রণ, ক্ষত ও মাংসপেশী থেঁতলে গেলে, বিষাক্ত পোকায় কামড়ালে এই পাতার রস আগুনে সেঁকে লাগালে উপকার পাওয়া যায়।

জেনে নিন পাথরকুচি পাতার স্বাস্থ্য উপকারিতা-

কিডনির পাথর অপসারণ

পাথরকুচি পাতা কিডনি এবং গলব্লাডার পাথর অপসারণ করতে সাহায্য করে।

পেট ফাঁপা

অনেক সময় দেখা যায় পেট ফুলে গেছে অথবা প্রসাব আটকে আছে। সে ক্ষেত্রে একটু চিনির সাথে এক বা দুই চা-চামচ পাথর কুচির পাতার রস গরম করে পানির সাথে মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যাবে।

মৃগী

মৃগী রোগাক্রান্ত সময়ে পাথর কুচির পাতার রস ২-১০ ফোঁটা করে মুখে দিতে হবে, এর রস একটু পেটে গেলেই রোগের উপশম হবে।

শিশুদেও পেট ব্যথায়

শিশুর পেটব্যথা হলে, ৩০-৬০ ফোঁটা পাথর কুচির পাতার রস পেটে মালিশ করলে ব্যথার উপশম হয়।

ত্বকের যত্ন

পাথরকুচি পাতায় রয়েছে জ্বালাপোড়া কমানোর ক্ষমতা, পাথরকুচি পাতায় প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে যা ত্বকের জন্য খুবই উপকারী।

পাইলস

পাথরকুচি পাতার রসের সাথে গোল মরিচ মিশিয়ে পান করলে পাইলস্ ও অর্শ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

জন্ডিস নিরাময়ে

লিভারের যেকোনো সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে তাজা পাথরকুচি পাতা ও এর জুস অনেক উপকারী।

শরীর জ্বালাপোড়া

দু-চামচ পাথর কুচি পাতার রস, আধা কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে দুবেলা খেলে শরীরের জ্বালাপোড়া কমে।

উচ্চ রক্তচাপ

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এবং মুত্রথলির সমস্যা থেকে মুক্তি দেয় পাথরকুচি পাতা।

মাথা ব্যাথা দূর করে

পাথরকুচি পাতার পেস্ট কিছুক্ষন কপালে লাগিয়ে রাখুন। এতে করে মাথাব্যথা কমবে। যাদের ঘন ঘন মাথাব্যথা হয় পাথরকুচির পেস্ট তাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

পাথরকুচি পাতা চোখের জন্য উপকারী

পাথরকুচি পাতার রস চোখের চারপাশে লাগান। এই রস চোখের সাদা অংশের ব্যথা নিরাময় করে চোখে আরাম প্রদান করবে।

গলগন্ড রোগে

গলগন্ড রোগে আক্রান্ত হলে প্রতিদিন দুইবেলা করে পাথরকুচির পাতার রস সেবন করুন।

খোঁস – পাচড়া, ফোড়া প্রতিরোধে

পাথরকুচির রস, পেস্ট চামড়ার বিভিন্ন সমস্যা যেমন – খোস পাচড়া, ফোড়াসহ আরো প্রহাদ থেকে রেহাই দেয়।

পিত্তথলির রোগের ক্ষেত্রে

পিত্তজনিত কোনো ব্যথায় রক্তক্ষরণ হলে পাথ্রকুচির রস খাওয়া উচিত। পরপর দুইদিন দুইবেলা করে পাথরকুচি পাতার রস খেতে হবে।

মেহ দূর হয়

সর্দিজনিত কারণে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফোঁড়া দেখা হতে পারে। এই ফোড়ার কারণে যে ব্যথা হয়, তাকে মেহ বলে।মেহ দূর করতে পাথরকুচি পাতার রস দিনে দুইবেলা এক চামচ করে টানা এক সপ্তাহ খেতে হবে।

মূত্রনালীর সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে

অনেক সময় নারীদের যোনিপথে স্রাবের কারণে অনেক কষ্ট হয়। পাথরকুচি পাতা এই সমস্যা সমাধানে বিশেষ ভূমিকা পালন করে, পাথরকুচি পাতার পেস্টের সাথে মধু মিশিয়ে মিশ্রণটি দিনে দুইবার গ্রহণ করুন। এই মিশ্রণটি ব্যবহারে পুরুষের মূত্রনালীর সমস্যা, প্রসাবে জ্বালাপোড়া, প্রদাহ ও দূর হয়।

পাথরকুচি পাতার অপকারিতা

উপকারিতার পাশাপাশি পাথরকুচির কিছু অপকারিতা রয়েছে –

  • অতিরিক্ত পাথরকুচি পাতার রস খাওয়ার ফলে মুখের স্বাদ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
  • পাথরকুচির রস মাত্রারিক্ত সেবনের ফলে পেটের নানান সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন – কলেরা, ডায়রিয়া।
  • পিত্তথলিতে সমস্যা হতে পারে।
  • ক্ষুধামন্দা সৃষ্টি হতে পারে।

পাথরকুচি পাতা খাওয়ার নিয়ম

  • পাথরকুচির পাতা বেটে পেস্ট করে খেতে পারে। এতে করে শরীরের জালাপোড়া অনেকাংশে কমে আসবে।
  • পাথরকুচি পাতা বেটে এর রস খেতে পারেন। প্রয়োজন অনুযায়ী পাতার রসের সাথে গোলমরিচ, মধুসহ অন্যান্য উপাদান মেশাতে পারেন। কিডনির সমস্যা সমাধানের জন্য পাথরকুচির রস খাওয়া শরীরের জন্য ভালো।
  • সরাসরি পাথরকুচির পাতা চিবিয়েও খেতে পারেন।

ঔষধি গাছের মধ্যে পাথরকুচি গাছ অন্যতম। এই গাছের বহু ঔষধি গূনাগুন রয়েছে। পেস্ট, রস এমনকি শুধু পাতা চিবিয়েও খাওয়া যায়। আশা করি আজকের এই আলোচনায় পাথরকুচির বহুল উপকারিতা ও ব্যবহারের নিয়ম আপনাদের উপকারে আসবে।

পরিশেষে

আশা করি উপরোক্ত আলোচনা থেকে আপনাদের পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে ভালো একটা ধারণা হয়েছে।