পাগলা মসজিদ

আধূনিক স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত পাগলা মসজিদ টি নানা ধরণের ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থাপনা হিসেবে খ্যাত। জনশ্রুতি আছে যে, পাগলবেশী এক আধ্যাত্মিক পুরুষ খরস্রোতা নরসুন্দা নদীর মধ্যস্থলে মাদুর পেতে ভেসে এসে বর্তমান মসজিদের কাছে স্থিত হন এবং তাঁকে ঘিরে আশেপাশে অনেক ভক্তকূল সমবেত হন। উক্ত পাগলের মৃত্যুর পর তাঁর সমাধির পাশে পরবর্তীতে এই মসজিদটি গড়ে উঠে তাই কালক্রমে এটি পাগলা মসজিদ নামে পরিচিত হয়। মসজিদটি শুধু ইসলাম ধর্মাবলম্বীর কাছেই নয়, সকল র্ধমাবলমবীর কাছে অত্যন্ত পবিত্র ধর্মীয় কেন্দ্র হিসেবে পরিগণিত। অনেকের বদ্ধমূল বিশ্বাস যে, কেহ সহি নিয়তে এ মসজিদে দান খয়রাত করলে তার ইচ্ছা পূর্ণ হয়।

পাগলা মসজিদ

কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে প্রায় আড়াইশ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ (Pagla Masjid) অবস্থিত। প্রচলিত আছে, পাগলবেশী এক আধ্যাত্মিক সাধক নরসুন্দা নদীর বুকে মাদুরে ভেসে মসজিদের স্থানে এসে অবস্থান নেন। ধীরে ধীরে তাঁকে ঘিরে ভক্তদের সমাগম হতে থাকে। আধ্যাত্মিক সাধকের মৃত্যুর পর তাঁর কবরের পাশে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়। যা বর্তমানে পাগলা মসজিদ নামে অত্যন্ত সুপরিচিত।

আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত এই পাগলা মসজিদের বর্তমান জমির পরিমাণ ৩ একর ৮৮ শতাংশ। যদিও প্রথম দিকে হয়বতনগর দেওয়ানবাড়ির ওয়াকফকৃত ১০ শতাংশ জমিই কেবলমাত্র মসজিদের নামে অন্তর্ভুক্ত ছিল। তিন তলা বিশিষ্ট পাগলা মসজিদের ছাদে তিনটি বড় গম্বুজ এবং ৫ তলা ভবনের সমান একটি মিনার রয়েছে। প্রায় সহস্রাধিক মুসল্লির ধারণক্ষমতা সম্পন্ন এই মসজিদে নারীদের নামাজ আদায়ের জন্য পৃথক ব্যবস্থা রয়েছে।

বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে পাগলা মসজিদের রয়েছে বিশেষ আধ্যাত্মিক গুরুত্ব। এক কথায় বলা যায়, সকল ধর্মের মানুষের কাছে পাগলা মসজিদ এক সার্বজনীন পবিত্র ধর্মীয় কেন্দ্র। মানুষজন বিশ্বাস করেন, যদি যেকেউ একনিষ্ঠ নিয়তে পাগলা মসজিদে কোন কিছু দান করে তাহলে তার মনের বাসনা পূর্ণ হয়। এমন বিশ্বাসের কারণে মানুষজন পাগলা মসজিদে প্রচুর দান-খয়রত করেন। আর অধিক দান-খয়রতের কারণে পাগলা মসজিদ ইতিমধ্যেই দেশের অন্যতম আয়কারী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। এই মসজিদের আয়ের একটা অংশ অন্যান্য মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা সহ বিভিন্ন উন্নয়ন ও সেবামূলক খাতে ব্যয় করা হয়। এছাড়া ২০০২ সালে মসজিদের পাশে একটি হাফেজিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

বর্তমানে লেকসিটি প্রকল্পের আওতায় পাগলা মসজিদের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নরসুন্দা নদী খনন, দৃষ্টিনন্দন সেতু নির্মাণ, মসজিদের শোভাবর্ধন এবং রঙিন আলোকসজ্জার জন্য দিনে ও রাতে মসজিদটি দেখতে চমৎকার লাগে।

কিভাবে যাবেন

কিশোরগঞ্জ জেলা সদরের গুরুদয়াল সরকারী কলেজ এবং আধুনিক সদর হাসপাতালে খুব কাছেই ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের অবস্থান। কিশোরগঞ্জ পৌর শহরের যেকোন স্থান থেকে রিকশা বা ইজিবাইক ভাড়া নিয়ে পাগলা মসজিদে যেতে পারবেন।

ঢাকা থেকে ট্রেনে কিশোরগঞ্জ

কমলাপুর রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে কিশোরগঞ্জ যাওয়ার ৩ টি আন্তঃনগর ট্রেন রয়েছে। ট্রেনগুলো সকাল ৭ টা ৪০মিনিট, সকাল ১০ টা ২০ মিনিট এবং সন্ধ্যা ৬ টা ২০ মিনিটে কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ট্রেনে কিশোরগঞ্জ যাওয়ার ক্ষেত্রে সকালের এগারোসিন্ধুর প্রভাতীতে চড়লে হাতে অনেক সময় পাবেন। ট্রেন ভাড়া শ্রেণী অনুযায়ী ১২০-২০০ টাকা এবং সময় লাগবে প্রায় ৪ ঘন্টা ২০ মিনিট। কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে অটোরিকশা রিজার্ভ নিয়ে পাগলা মসজিদ আসতে ১০০ থেকে ১২০ টাকা খরচ হবে। আর লোকালে খরচ হবে জনপ্রতি ১৫ টাকা।

ঢাকা থেকে বাসে কিশোরগঞ্জ

ঢাকার মহাখালী থেকে অনন্যা পরিবহণ, অনন্যা ক্লাসিক এবং গোলাপবাগ (সায়েদাবাদ) থেকে যাতায়াত, অনন্যা সুপার ইত্যাদি বাস ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রুটে চলাচল করে। বাস ভাড়া ২০০-২৫০ টাকা। মহাখালী থেকে সময় লাগবে প্রায় সাড়ে ৩ ঘন্টা এবং গোলাপবাগ থেকে সময় লাগবে প্রায় ৪ ঘন্টা। কিশোরগঞ্জ বাস স্ট্যান্ড থেকে ২০-২৫ টাকা রিকশা ভাড়ায় সরাসরি পাগলা মসজিদ যেতে পারবেন। এছাড়া বাস স্ট্যান্ড হতে লোকাল ইজিবাইকে জনপ্রতি ৫ টাকা ভাড়ায় গুরুদয়াল কলেজ সংলগ্ন বটতলা নামক স্থানে নেমে ৫ মিনিট হাটলেই পাগলা মসজিদে পৌঁছে যাবেন।

কোথায় খাবেন

কিশোরগঞ্জ শহরে গাংচিল, তাজ, স্টার ওয়ান, ধানসিঁড়ি, ইস্টিকুটুম, দারুচিনি, মাছরাঙ্গা ইত্যাদি রেস্টুরেন্টে পছন্দের খাবার খেতে পারবেন। আর মিষ্টি পাগল হলে একরামপুরের লক্ষী নারায়ণ মিষ্টান্ন ভান্ডার কিংবা মদন গোপালে ঢু মারতে পারেন।

কোথায় থাকবেন

রাত্রিযাপনের জন্য কিশোরগঞ্জ সদরের স্টেশন রোডে হোটেল শেরাটন, রিভার ভিউ, গাংচিল, নিরালা, উজান ভাটি, ক্যাসেল সালাম সহ বেশকিছু ভাল মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। এছাড়া অনুমতি সাপেক্ষে জেলা সদরের সরকারি ডাক-বাংলোতে থাকতে পারবেন।

আশেপাশের দর্শনীয় স্থান

কিশোরগঞ্জ জেলার উল্লেখযোগ্য ভ্রমণ স্থানের মধ্যে আছে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান, কবি চন্দ্রাবতীর মন্দির, গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ি, কিশোরগঞ্জ লেক পার্ক, ঈশা খাঁর জঙ্গলবাড়ি দূর্গ, বালিখলা, মিঠামইন হাওর ও নিকলী হাওর ইত্যাদি।