বয়স ৩০ হওয়ার আগেই ধনী হতে চাইলে যে ৭টি পরামর্শ মেনে চলবেন

বয়স ২০–এর (স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে বয়সের সীমা বাড়বে) মধ্যেই কর্মক্ষেত্রে ভালো দক্ষতা অর্জনের দিকে গুরুত্ব দিতে বলেছেন স্টেফান। তিনি মনে করেন, ‘প্রতিটি কাজ থেকে অর্জন করা দক্ষতা পরবর্তী কর্মক্ষেত্রে আপনাকে অনেকটা এগিয়ে রাখবে।’

প্রথমে নিজের পছন্দের কাজ দিয়েই কর্মজীবন শুরু করতে পারেন। পারিশ্রমিক পান বা না পান, কাজটা করতে থাকুন। পারিশ্রমিকের চেয়ে দক্ষতা অর্জনের দিকে বেশি নজর দিন। শুরুর সময়টা জ্ঞানার্জনের জন্য ব্যয় করুন।

বয়স ৩০ হওয়ার আগেই ধনী হতে চাইলে যে ৭টি পরামর্শ মেনে চলবেন:

মার্কিন রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী গ্রাহাম স্টেফানের বয়স ৩৪। এই বয়সেই হয়েছেন মিলিয়ন ডলারের মালিক। ব্যবসার পাশাপাশি রিয়েল এস্টেট ব্যবসার খুঁটিনাটি, অর্থ সঞ্চয় ও আর্থিক স্বাধীনতা নিয়ে নানা রকম পরামর্শমূলক ভিডিও তৈরি করেন, ইউটিউবে তাঁর চ্যানেলটি বেশ জনপ্রিয়। এখানে পড়ুন তাঁর ৭টি পরামর্শ, যাতে আছে ত্রিশের আগেই ধনী হওয়ার প্রাথমিক দিকনির্দেশনা…

কার পরামর্শ নিচ্ছেন, তা খেয়াল রাখুন:

বেশির ভাগ খারাপ আর্থিক পরামর্শ আসে সেসব ব্যক্তির কাছ থেকে, যাঁরা সফল নন। স্টেফান বলেন, ‘কার কাছে পরামর্শ চাইছেন, সে ব্যাপারে সাবধানী হোন। পরামর্শ নিতে গেলে আপনি এমন অনেক মানুষকেই পাবেন, যাঁরা আদতে কিছু না করে, সফল না হয়েই আপনাকে বলবে কী করতে হবে বা কী করা উচিত।’ তাই যাঁরা নেতিবাচক কথা বলেন, নেতিবাচক চিন্তা করেন, তাঁদের থেকে দূরে থাকুন। আপনি ঠিক যাঁদের অনুসরণ করেন, যাঁদের মতো হতে চান, শুধু তাঁদের পরামর্শ নিন।

ভালো ক্রেডিট হিস্ট্রি তৈরি করুন:

আর্থিক সাফল্য অর্জনের জন্য শুরুতেই একটি ভালো ‘ক্রেডিট হিস্ট্রি’ তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ। সহজ বাংলায়, ক্রেডিট হিস্ট্রি মানে কোনো ব্যক্তির সময়মতো ঋণ পরিশোধ করার সক্ষমতার রেকর্ড। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি যেকোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে তা সময়মতো পরিশোধ করতে সক্ষম কি না, তার একটা রেকর্ড হলো এই ‘ক্রেডিট হিস্ট্রি’। প্রথমে একটি বিশ্বাসযোগ্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রেডিট তৈরি করতে পারেন। শুরুতে সেখান থেকে হিসাব করে খরচ করুন এবং তা নিয়মিত পরিশোধ করার চেষ্টা করুন। এটি আপনাকে বেশ ভালো একটি ক্রেডিট হিস্ট্রি তৈরি করতে সাহায্য করবে। আপনার ক্রেডিট স্কোর নিয়মিত নজরদারিতে রাখুন। ক্রেডিট স্কোর হলো কোনো ব্যক্তির ঋণ সময়মতো পরিশোধ করার সক্ষমতার একটি সূচক। ক্রেডিট স্কোর নজরদারির জন্য অনেক ফ্রি অ্যাপ্লিকেশন পাবেন। ক্রেডিট শুরু করার ৬ থেকে ১২ মাস পর আরও ভালো বিকল্প ক্রেডিটের জন্যে আবেদন করুন। তবে নিয়মিত পাওনা পরিশোধের দিকে খেয়াল রাখবেন। এটা আপনার ভালো ক্রেডিট স্কোর বয়ে আনবে।

নিজের দক্ষতা বাড়ান:

বয়স ২০–এর (স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে বয়সের সীমা বাড়বে) মধ্যেই কর্মক্ষেত্রে ভালো দক্ষতা অর্জনের দিকে গুরুত্ব দিতে বলেছেন স্টেফান। তিনি মনে করেন, ‘প্রতিটি কাজ থেকে অর্জন করা দক্ষতা পরবর্তী কর্মক্ষেত্রে আপনাকে অনেকটা এগিয়ে রাখবে।
প্রথমে নিজের পছন্দের কাজ দিয়েই কর্মজীবন শুরু করতে পারেন। পারিশ্রমিক পান বা না পান, কাজটা করতে থাকুন। পারিশ্রমিকের চেয়ে দক্ষতা অর্জনের দিকে বেশি নজর দিন। শুরুর সময়টা জ্ঞানার্জনের জন্য ব্যয় করুন।

সম্ভাবনাময় ব্যবসায় নামুন:

স্টেফান পরামর্শ দেন, আর্থিক উন্নতির জন্য পুরোপুরি চাকরির ওপর ভরসা না করে সম্ভাবনাময় কোনো ব্যবসা শুরু করা উচিত। এমন ব্যবসা শুরু করুন, যা ক্রমেই আপনার আয় বাড়াবে, বিপরীতে ব্যয় রাখবে নিয়ন্ত্রণে। ৩০ বছরে পা দেওয়ার আগেই ব্যবসা শুরু করে ভালোভাবে দেখভাল করতে পারলে তা আপনার আর্থিক অবস্থার দ্রুত উন্নতি বয়ে আনবে। স্টেফান আরও বলেন, যেকোনো ব্যবসায়ই ভালো করা সম্ভব, যদি অনলাইনে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন রিসোর্স (তথ্য–উপাত্ত) সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায়।

আয়ের একাধিক উৎস তৈরি করুন:

আয়ের একক উৎসের ওপর নির্ভর করাকে বেশ ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করেন স্টেফান। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারনাল রেভিনিউ সার্ভিসের (আইআরএস) একটি গবেষণার ফলাফল টেনে স্টেফান বলেন, বেশির ভাগ ধনীর কমপক্ষে সাত ধরনের আয়ের উৎস থাকে। তিনি বিশ্বাস করেন, আয়ের উৎসে বৈচিত্র্য আনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চাকরি, লভ্যাংশ, মূলধন অর্জন, রিয়েল এস্টেট ভাড়ার মতো বিভিন্ন রকমের উৎস থাকলে কম সময়েই আর্থিক সাফল্য ও স্থিতিশীলতা লাভ করা যায়। এ ছাড়া আয়ের আরও নতুন নতুন সুযোগও সৃষ্টি হয়।

জীবনযাপনের খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখুন:

জীবনযাপনের খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যাপারে স্টেফান সাবধানী হতে বলেছেন। উদাহরণ দিতে গিয়ে বলেন, ‘ধরুন, কারও আয় ৪০ হাজার ডলার থেকে বেড়ে ৬০ হাজার ডলার হলো। পরে তা বেড়ে ৯০ হাজার ডলারে গিয়ে দাঁড়াল। আয় বাড়লেও সঞ্চয় সে হারে বাড়বে না, যদি কেউ জীবনযাপনের খরচ নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারেন।’ এ ক্ষেত্রে সমাধান হলো, জীবনযাপনে নিয়ন্ত্রণ এনে খরচ কমিয়ে ফেলা। আয় বাড়লেও খরচ যাতে না বাড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখা।

দ্রুত বিনিয়োগ করুন:

সর্বাধিক লাভের জন্যে স্টেফান দ্রুত বিনিয়োগের দিকে গুরুত্ব দিয়েছেন বেশি। বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সময়ের উল্লেখযোগ্য প্রভাব আছে বলে তিনি মনে করেন। স্টেফান বলেন, ‘একজন ২০ বছর বয়সী ব্যক্তি ১ ডলার বিনিয়োগ করলে ৬৫ বছর বয়সে তা ২১ ডলারে গিয়ে দাঁড়াতে পারে। কিন্তু একই ব্যক্তি যদি ৩০ বছর বয়সে ওই ১ ডলার বিনিয়োগ করেন, তাহলে বয়স ৬৫–তে গিয়ে তা বেড়ে হবে মাত্র ১০ দশমিক ৬৮ ডলার।’

নিজের অভিজ্ঞতা থেকে স্টেফান তাই যত বেশি টাকা যত দ্রুত সম্ভব বিনিয়োগ করার পরামর্শ দেন। তিনি বিশ্বাস করেন, এসব পরামর্শ মেনে চললে ২০ বছরের যেকোনো তরুণ ৩০–এ পা দেওয়ার আগেই ধনী হয়ে উঠতে পারবেন।