আজকে আমি প্রতিবেদন কাকে বলে, প্রতিবেদনের শ্রেনীবিভাগ কত প্রকার , প্রতিবেদন লেখার নিয়ম, একটি ভালো প্রতিবেদনের বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করবো আশা করি সবাই উপকৃত হবেন।
প্রতিবেদন কাকে বলে?
প্রতিবেদন শব্দটি ইংরেজি শব্দ Report থেকে এসেছে। যার অর্থ সমাচার, বিবৃতি বা বিবরণী। নির্দিষ্ট কোন বিষয় সংশ্লিষ্ট যাবতীয় প্রয়োজনীয় তথ্য অনুসন্ধানের পর সেটিকে সুসংগঠিত করে বিবরণী আকারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করাই হল প্রতিবেদন। যেকোন নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে তথ্য সমৃদ্ধ বিবরণীকেই সংক্ষেপে প্রতিবেদন বলা যেতে পারে। যেকোন বিষয় নিয়েই প্রতিবেদন লেখা যেতে পারে, তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই পর্যবেক্ষণ, পর্যালোচনা, বিচার-বিশ্লেষণ, গবেষণা এবং সার্বিক সতর্কতা বিবেচনায় রেখে প্রস্তুত করতে হয়।
যিনি প্রতিবেদন প্রস্তুত করেন, তাকে বলা হয় reporter বা প্রতিবেদক। একজন প্রতিবেদকের মূল দায়িত্ব হল, যে বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন করা হবে সেই বিষয় সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় যাবতীয় তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে, সেসব তথ্যের সত্যতা যাচাই করে সিদ্ধান্ত গ্রহন করা এবং সুসংগঠিত আকারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে তা বিবরণী আকারে উপস্থাপন করার উপযোগী করে তোলা।
প্রতিবেদন প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে একজন প্রতিবেদকের ব্যক্তিগত আবেগ-অনুভূতি, নিজস্ব মতামত, মন্তব্য বা সুপারিশ উপস্থাপনের সুযোগ নেই, তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রতিবেদক সুপারিশ বা মন্তব্য উপস্থাপন করতে পারেন যা কিনা কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনে বিবেচনায় আনতে পারেন।
প্রতিবেদনের শ্রেনীবিভাগঃ
প্রতিবেদনের সুনির্দিষ্ট কোন শ্রেনীবিভাগ নেই, তবে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে এটি করা যেতে পারে।
বহুল প্রচলিত এবং উল্লেখযোগ্য কিছু প্রতিবেদন হলঃ
১। সংবাদ প্রতিবেদন – কোন ঘটনা সম্পর্কিত প্রতিবেদন, সংবাদ সংস্থার নিজস্ব সংবাদপ্রতিবেদক ও দেশ-বিদেশের সংবাদ মাধ্যমের সাহায্যে এসব সংবাদ সংগ্রহ করা হয়।
২। প্রাতিষ্ঠানিক/ দাপ্তরিক প্রতিবেদন – কোন প্রাতিষ্ঠানিক ঘটনা, স্থান, অবস্থা প্রভৃতি বিষয় যাচাই করে সে-সম্পর্কিত তথ্য, তত্ত্ব-উপাত্ত উপস্থাপন করা হয়। দাপ্তরিক প্রতিবেদন দুই ধরনের হয়ে থাকে।
- তদন্ত প্রতিবেদন – কোনো ঘটনা, দুর্ঘটনা, যোগাযোগ, হত্যাকাণ্ড, অনিয়ম, দুর্নীতি ইত্যাদি বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে তদন্ত সাপেক্ষে প্রকাশ করা হয়।
- কারিগরি প্রতিবেদন – কোন উন্নয়ন প্রকল্প, প্রকল্পের ব্যয়, প্রযুক্তিগত সম্ভাব্যতা, জনহিত কাজ, সামাজিক অবদান, অর্থনৈতিক মুনাফা ইত্যাদি বিষয়ে তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন।
প্রতিবেদন লেখার নিয়মঃ
একটি প্রতিবেদনের কিছু মৌলিক বিষয় থাকে, যেগুলো ব্যতীত এটি সম্পূর্ন হয়ে উঠতে পারে না। ফলে একটি প্রতিবেদনের পরিপূর্ণতা নিশ্চিত করার জন্য এটি লেখার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় বা অংশের কথা মাথায় রাখা উচিৎ।
- শিরোনাম
- প্রতিবেদকের নাম
- স্থান
- তারিখ
এই ৪টি অংশ না থাকলে একটি প্রতিবেদন পরিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে না, থেকে যায় অসম্পূর্ণ। ফলে একটি ভালো প্রতিবেদন লেখার ক্ষেত্রে উপরোক্ত ৪টি অংশ এবং বৈশিষ্ট্যগুলোর কথা মাথায় রেখে লেখা প্রয়োজন।
পত্রিকায় প্রকাশের জন্য বা দাপ্তরিক প্রতিবেদনের ক্ষেত্রে নিচের গঠন কাঠামো অনুসরণ করা যেতে পারে।
শিরোনাম – নির্দিষ্ট বিষয় সংক্রান্ত সুন্দর একটি শিরোনাম, যা কিনা পুরো প্রতিবেদনকে উপস্থাপন করতে সক্ষম।
প্রতিবেদন – প্রতিবেদকের ব্যক্তিগত আবেগ-অনুভূতি, নিজস্ব মতামত, মন্তব্য বা সুপারিশ বিবর্জিত, তথ্য বহুল এবং নিরপেক্ষ একটি উপস্থাপনা। প্রতিবেদকের নাম: স্থান: তারিখ: |
সংবাদ প্রতিবেদক হিসেবে গণ মাধ্যমের জন্য সংবাদ প্রতিবেদন লেখার ক্ষেত্রে ক্ষেত্রে কাঠামো টি একটু ভিন্ন হয়ে থাকে।
শিরোনাম –
প্রতিবেদন – প্রতিবেদকের নামঃ ঠিকানাঃ শিরোনামঃ সময়ঃ তারিখঃ |
প্রতিবেদনের গঠন কাঠামো এবং লেখার নিয়ম বোঝার সুবিধার্থে নিচে ৩টি পৃথক sample সংযুক্ত করে দেয়া হল।
একটি ভালো প্রতিবেদনের বৈশিষ্ট্যঃ
একটি ভালো প্রতিবেদনের কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে, নিচে সেগুলো নির্দিষ্ট আকারে উল্লেখ করে দেয়া হল।
- একটি আকর্ষনীয় শিরোনাম
- এটি হতে হবে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যবহুল এবং সংক্ষিপ্ত
- এটিতে প্রকাশিত তথ্য হতে হবে সুনির্দিষ্ট, সুনির্বাচিত, নির্ভূল, নিরপেক্ষ
- প্রতিবেদন হবে সম্পূর্ণ, এটির ভাষা হবে সহজ, সরল, প্রাঞ্জল এবং সাবলীল
- প্রতিবেদনের শিরোনামের সাথে মূল প্রতিবেদনের তথ্যের মিল থাকবে
- কোন প্রকার অগ্রিম মতামত, সুপারিশ বা ভবিষ্যৎবাণী দেয়া উচিৎ নয়