দোয়া কুনুত

দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে সুরা-কেরাত, দরুদ, তাশাহুদ, দোয়ায়ে মাসুরাসহ বিভিন্ন দোয়া পড়া হয়। নামাজে এসব পড়া আবশ্যক। এমন দোয়ার মতো আরেকটি আমল হল- দোয়া কুনুত। দোয়া কুনুতকে মূল্যবান দোয়াগুলোর মধ্যে থেকে অন্যতম মনে করা হয়। এই দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে গুরুত্বপূর্ণ আবেদনগুলো তুলে ধরা হয়। দোয়া কুনুত রাসুল (সা.) মাঝে মাঝে পাঠ করতেন।

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আমি একরাতে নবী (স.)-এর নিকটে ছিলাম। তিনি শয্যাত্যাগ করলেন এবং দুই রাকাত নামাজ পড়লেন। এরপর উঠে বিতর পড়লেন। প্রথম রাকাতে ফাতেহার পর সুরা আ’লা পাঠ করলেন। এরপর রুকু ও সেজদা করলেন। দ্বিতীয় রাকাতে ফাতেহা ও কাফিরুন পাঠ করলেন এবং রুকু-সেজদা করলেন। তৃতীয় রাকাতে ফাতেহা ও ইখলাস পাঠ করলেন। এরপর রুকুর আগে কুনুত পড়লেন।’ (কিতাবুল হুজ্জাহ: ১/২০১; নাসবুর রায়াহ: ২/১২৪)

দোয়া কুনুত কি ?

দোয়া কুনুত (আরবি: القنوت) বিতর সালাতে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) মাঝে মাঝে দুয়া কুনুত পাঠ করতেন। এক/তিন/পাঁচ/সাত/এগারো রাকাত বিতের সালাতের শেষ রাকাতে রুকুতে যাওয়ার আগে বা রুকু থেকে উঠে দুই হাত তুলে বা বেধে দুআ কুনুত পাঠ করতে হয়।

দোয়া কুনুত এর আরবি :

اَللَّهُمَّ اِنَّ نَسْتَعِيْنُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَنُؤْمِنُ بِكَ وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ وَنُثْنِىْ عَلَيْكَ الْخَيْرَ وَنَشْكُرُكَ وَلاَ نَكْفُرُكَ وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَّفْجُرُكَ-اَللَّهُمَّ اِيَّاكَ نَعْبُدُ وَلَكَ نُصَلِّىْ وَنَسْجُدُ وَاِلَيْكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ وَنَرْجُوْ رَحْمَتَكَ وَنَخْشَى عَذَابَكَ اِنَّ عَذَابَكَ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ

দোয়া কুনুত এর আরবি উচ্চারণ :

আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতায়িনুকা ওয়া নাসতাগ ফিরুকা, ওয়ানু’মিনু বিকা ওয়া নাতাওয়াক্কালু আলাইকা ওয়া নুছনি আলাইকাল খাইর। ওয়া নাসকুরুকা ওয়ালা নাক ফুরুকা, ওয়ানাখলাউ উয়ানাত রুকু মাইয়্যাফযুরুকা। আল্লাহুম্মা ইয়্যাকানা’বুদু ওয়ালাকা নুছল্লি, ওয়ানাস জুদু ওয়া ইলাইকা নাসয়া; ওয়া নাহফিদু ওয়া নারজু রাহমাতাকা, ওয়া নাখশা আজাবাকা; ইন্না আজাবাকা বিলকুফফারি মুলহিক্।

দোয়া কুনুত এর বাংলা অর্থ :

হে আল্লাহ! আমরা তোমারই সাহায্য চাই। তোমারই নিকট ক্ষমা চাই, তোমারই প্রতি ঈমান রাখি, তোমারই ওপর ভরসা করি এবং সকল মঙ্গল তোমারই দিকে ন্যস্ত করি। আমরা তোমার কৃতজ্ঞ হয়ে চলি, অকৃতজ্ঞ হই না। হে আল্লাহ! আমরা তোমারই দাসত্ব করি, তোমারই জন্য নামাজ পড়ি এবং তোমাকেই সিজদাহ করি। আমরা তোমারই দিকে দৌড়াই ও এগিয়ে চলি। আমরা তোমারই রহমত আশা করি এবং তোমার আযাবকে ভয় করি। আর তোমার আযাবতো কাফেরদের জন্যই র্নিধারিত।

দোয়া কুনুত এর ঐতিহাসিক ঘটনা :

আহমদ বিন হাম্বল, মুহাম্মাদ ইবনে ইসা আত-তিরমিজি এবং আবু দাউদের বর্ণনা থেকে জানা যায়, হাসান ইবনে আলী রা. এই দোয়াটি মুহাম্মাদের (সা.) কাছ থেকে শিখেছিলেন। দাউদ আরও বলেছেন যখন মুসলমানদের ওপর কোনো বিপদ অথবা বিপর্যয় আসতো তখন মুহাম্মদ (সা.) দোয়া কুনুত পড়তেন।

দোয়ায়ে কুনুত এর বদলে সুরা ইখলাস পড়া যাবে কি?

দোয়ায়ে কুনুত দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর কাছে দোয়া করা। এ ক্ষেত্রে প্রসিদ্ধ দোয়া ‘আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতাঈনুকা’ ছাড়া একই মর্মার্থের অন্য যেকোনো দোয়া পড়লেও বিশুদ্ধভাবে নামাজ আদায় হয়ে যাবে। যেমন ‘রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনইয়া’ বা এই জাতীয় দোয়া পড়া। কেউ যদি এটা না পারে তাহলে তিনবার ‘আল্লাহুম্মাগফিরলি’ কিংবা তিনবার ‘ইয়া রব’ পড়লেও নামাজ হয়ে যাবে। তবে প্রসিদ্ধ দোয়াটি পড়া সুন্নত এবং সর্বোত্তম। আহসানুল ফতোয়া : ৩/৪৪৯

দোয়ায়ে কুনুতের মর্মার্থ এবং সুরা ইখলাসের মর্মার্থ ভিন্ন ভিন্ন। তাই দোয়ায়ে কুনুতের বদলে সুরা ইখলাস না পড়া। কেননা এই দোয়া পড়া সুন্নত। আর ইচ্ছাকৃতভাবে সুন্নত ত্যাগ করা গোনাহ।

দোয়া কুনুত এর ফজিলত :

দোয়াই কুনুত আল্লাহ তাআ’লা সাথে প্রেম আলাপ। এই দোয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ দোয়া। এই দোয়ার মূল উদ্দেশ্য হল আল্লাহর নিরাপত্তা ও নির্দেশনা চাওয়া, সেইসাথে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং আমাদের পাপের জন্য ক্ষমা চাওয়া। এটি আল্লাহ তাআ’লা সাথে সংলাপ করা হয়। এই দোয়া বেশি বেশি পাঠ করে আল্লাহ তাআ’লা অনেক খুশি হয় এবং সকল আশা পূরণ করে তাকে।

দোয়া কুনুত হলো গভীর রাতে আল্লাহর সঙ্গে বান্দার একান্ত প্রেমালাপ। বন্ধা যা ছায় আল্লাহ তাআ’লা সে বন্ধাকে সব কিছু দেন। আল্লাহ তাআ’লা রাতে বন্ধাকে খুজতে তাকে বন্ধা তর কি কি লাগবে তর কি কি সমস্যা আছে বল।

এভাবে আল্লাহ তাআ’লা সাথে এই দোয়া কুনুত পাঠ করলে আল্লাহ তাআ’লা খুশি হন। বন্ধার যা ছায় আল্লাহ তাআ’লা সব কিছু দেন।

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আমি একরাতে নবী (স.)-এর নিকটে ছিলাম। তিনি শয্যাত্যাগ করলেন এবং দুই রাকাত নামাজ পড়লেন। এরপর উঠে বিতর পড়লেন। প্রথম রাকাতে ফাতেহার পর সুরা আ’লা পাঠ করলেন। এরপর রুকু ও সেজদা করলেন। দ্বিতীয় রাকাতে ফাতেহা ও কাফিরুন পাঠ করলেন এবং রুকু-সেজদা করলেন। তৃতীয় রাকাতে ফাতেহা ও ইখলাস পাঠ করলেন। এরপর রুকুর আগে কুনুত পড়লেন।’ (কিতাবুল হুজ্জাহ: ১/২০১; নাসবুর রায়াহ: ২/১২৪)

দোয়া কুনুত পাঠ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল এই দোয়া কোন ব্যাক্তি নিয়মিত পাঠ করলে সে ব্যাক্তির সকল আশা পূরণ করে দেয়। তোমার কৃতজ্ঞ হয়ে চলি, অকৃতজ্ঞ হই না। হে আল্লাহ! আমরা তোমারই দাসত্ব করি, তোমারই জন্য নামাজ পড়ি এবং তোমাকেই সিজদাহ করি। আমরা তোমারই দিকে দৌড়াই ও এগিয়ে চলি। আমরা তোমারই রহমত আশা করি এবং তোমার আযাবকে ভয় করি। দোয়া কুনুত হলো একটি দোয়া যা আল্লাহ তাআ’লা কাছে বন্ধা প্রেম আলাপ। আল্লাহ তাআ’লা সাথে বন্ধার যত ধরনের সমস্যা সমাধানের আপদ বিপদ সব কিছু সমাধান। তাই দোয়া কুনুত ভালো করে বুঝে শুনে মুখস্থ করতে হবে আমিন।

বিতরের নামাজে দোয়া কুনুত না পড়লেও সমস্যা নেই, এটা কি ঠিক?

বিতরের সালাতের মধ্যে দোয়া কুনুত সুন্নাহ। যদি কেউ পড়ে, তাহলে তিনি দোয়া পড়লেন। আর যদি কেউ মনে করেন যে আমি দোয়া পড়ব না, শুধু এক রাকাত পড়ে শেষ করে দেব, তাহলেও এটি জায়েজ রয়েছে। সালফে সালেহীনগণ দোয়া কুনুতকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। ফলে একদল ওলামায়ে কেরাম এটাকে সুন্নাহ, আবার কেউ কেউ এটাকে ওয়াজিব বলেছেন। তবে ওয়াজিবের বক্তব্যটি সনদের দিক থেকে দুর্বল। কেউ যদি দোয়া কুনুত না জানেন, তাহলে তিনি যেকোনো ধরনের দোয়া পড়তে পারবেন। সুরা ইখলাস তিনবার পড়ার ব্যাপারে কোনো হাদিস সাব্যস্ত হয়নি। আর যদি কোনো দোয়া জানা না থাকে, তাহলে তিনি তাসবিহ ও তাকবির করবেন।

সুতরাং এত সুন্দর একটি দোয়া সবার জানা থাকা উচিত। যা বিতর নামাজে পড়া হয়। আল্লাহ তাআলা উক্ত দোয়ার মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য অর্জন করার তাওফিক দান করুন।
আমিন।