আজ আমরা তোকমা দানার উপকারিতা সম্পর্কে জানবো। আয়ুর্বেদ, উনানী এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চায়নিজ মেডিসিনে ব্যবহৃত প্রাকৃতিক উপাদানটির নাম হলো তোকমার বীজ বা তোকমা (Basil Seeds)। তোকমা হলো Ocimum Sanctum ঘরানার উদ্ভিজ উপাদান। যা বিভিন্ন ধরণের পানীয় ও মিষ্টি জাতীয় খাদ্যে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। দেখতে একেবারেই সাদামাটা এই উপাদানটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, আয়রন, আঁশ এবং শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালোরি।
সুস্বাস্থ্যের জন্য এবং বিভিন্ন ধরণের শারীরিক সমস্যা দূর করার জন্যে তোকমা খুব ভালো কার্যকরী একটি উপাদান। অনেকেই নিয়মিত তোকমার শরবত পান করে থাকেন। তবে যারা এখনও তোকমা গ্রহণ করা শুরু করেননি, তারাও দ্রুত কিনে ফেলুন তোকমা। কারণ, এই একটি মাত্র উপাদানের অগণ্য গুণাগুণ কোনোভাবে এড়িয়ে যাওয়া উচিৎ হবে না আপনার।
ওজন কমাতে
দেহের ওজন কমাতে এ বীজের জুড়ি নেই। তোকমার ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এ ছাড়া এর নানা উপাদান দেহের চর্বি কমাতে সহায়তা করে। এতে রয়েছে প্রচুর আঁশ, যা বাড়তি ক্ষুধা দূর করে এবং পেট দীর্ঘক্ষণ পরিপূর্ণ থাকার অনুভূতি দেয়।
এসিডিটি দূর করে
তোকমা এসিডিটি দূর করতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে তোকমা পানিতে ভিজিয়ে রেখে তারপর খেতে হবে। এছাড়াও তোকমার বীজ পানিতে পরিপূর্ণ থাকে, যা দেহের ক্ষতিকর পদার্থও দূর করতে সহায়ক।
রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ
রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতে কার্যকর তোকমা। মূলত দেহের বিপাকক্রিয়া ধীর করে দেয় তোকমা। ফলে কার্বোহাইড্রেটকে গ্লুুকোজে রূপান্তরের পদ্ধতি নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। এ কারণে টাইপ টু ডায়াবেটিস যাঁদের রয়েছে, তারা এটি নিয়মিত খেতে পারেন।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
তোকমা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। সামান্য তোকমা অল্প পানিতে ভিজিয়ে রেখে কিছুক্ষণ পর তা দুধে মিশিয়ে খেলেও উপকার পাওয়া যাবে। এছাড়াও এটি হজমের সমস্যাও দূর করতে সহায়তা করে।
সুস্থ ত্বক ও চুল
ত্বকের নানা সমস্যায় তোকমা ব্যবহার করা যায়। এ জন্য কিছু তোকমা বীজ গুঁড়ো করে তা নারিকেল তেলের সঙ্গে মাখিয়ে ত্বকে লাগাতে হয়। এটি নানা চর্মরোগ নিরাময়ে কাজ করে। এটি একজিমা ও সোরিয়াসিস নিরাময়ে কার্যকর। সুস্থ চুলের জন্য এটি নিয়মিত খাওয়া যেতে পারে।
ঠান্ডার সমস্যায়
তোকমা বীজে রয়েছে ঠান্ডা প্রতিরোধী উপাদান। এটি আপনার দেহকে ঠান্ডার বিরুদ্ধে প্রতিরোধক্ষমতা গড়তে সহায়তা করবে। সর্দি-কাশি থেকে দূরে থাকতে চাইলে তাই নিয়মিত তোকমা খাওয়া যেতে পারে।
ওমেগা-৩
ওমেগা-৩ শরীরের জন্য ভীষণ দরকারি একটি উপাদান। উদ্ভিদ ভিত্তিক ওমেগা অ্যাসিডের সবচেয়ে ভালো একটি উৎস হচ্ছে তোকমা দানা। তাই তোকমা খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
তোকমা খাওয়ার অপকারিতা
যেহেতু প্রায় প্রতিটা বিষয়ের খারাপ দিক এবং ভালো দিক রয়েছে তাই তোকমা খাওয়ার উপকারিতা থাকার পাশাপাশি তোকমা খাওয়ার অপকারিতা ও রয়েছে। তবে হ্যাঁ এই তোকমা দানা যেহেতু সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক একটি উপাদান তাই এর মধ্যে ভালো দিকের চেয়ে খারাপ দিক অনেক কম আছে।
তারপরেও পোস্টের এই অপশনে এসে আমরা আপনাদেরকে সুন্দর ভাবে তোকমা খাওয়ার অপকারিতা গুলো বুঝিয়ে দেব। চলুন তাহলে তোকমা সম্পর্কে এই বিষয়টি জেনে নেই।
- তোকমা খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায়নি। এর কারণ এই বিজটির ক্ষতিকর দিক খুবই কম। এরপরও যদি কোন গর্ভবতী মহিলাকে বেশি তোকমা প্রদান করা হয় তাহলে তার অনেক সমস্যা হতে পারে। গর্ভবতী মহিলাদের শরীরে থাকা ইস্ট্রোজেন হরমোনটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যদি তাকে খুব বেশি পরিমাণ তোকমা বীজ খাইয়ে দেওয়া হয় তখন এই ইস্ট্রোজেন হরমোনটির মাত্রা অনেকটা কমিয়ে আসতে পারে। যদি এই হরমনের মাত্রা খুব বেশি কমে আসে তাহলে তার অনেক সমস্যা হতে পারে এবং তার পেটের বাচ্চার ও বেশ ক্ষতি হতে পারে। এই কারণে গর্ভবতী মহিলাদেরকে তোকমা দানা খাওয়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
- যদি আমরা খুব ছোট শিশুদেরকে এটি খাওয়াই তাহলেও তাদের অনেক সমস্যা হতে পারে। যেহেতু ছোট শিশুর পেটে খুব বেশি পরিমাণে বিপাকীয় ক্ষমতা থাকে না তাই এটি থেকে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।এছাড়াও শিশুদের পেটের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে এই তোকমা। এমনকি এই তোকমা দানর মারাত্মক একটি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে শিশুদের ক্ষেত্রে সেটা হচ্ছে শিশুদের দম ও বন্ধ হয়ে আসতে পারে। এই কারণে শিশুদেরকে এটি কখনোই প্রদান করা যাবেনা সব সময় পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তিরা এটি সেবন করবেন।
- আমরা উপরে বারবার বলেছি আপনাদেরকে যে তোকমা দানা সবসময় পানিতে মিশিয়ে খেতে হবে। তো যদি আপনারা এই কাজটি ভালোভাবে করতে না পারেন তাহলেও তোকমা দানার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আপনার উপর পরিলক্ষিত হতে পারে। অর্থাৎ এই দানা খাওয়ার সময় ভালোভাবে পানির সাথে মিশিয়ে নিতে হবে এবং সাথে পারলে কিছু সুস্বাদু দিতে হবে। যদি পানির সাথে খুব ভালোভাবে মিক্সার করে না খাওয়া হয়। তাহলে এটি পেটে গেলে পেটের জ্বালাপোড়া বাড়িয়ে দিতে পারে এমনকি পেট ফুলেও যেতে পারে। উপরে আমরা যে কয়টি কথা আপনাদেরকে বললাম এগুলোই মূলত তোকমা খাওয়ার অপকারিতা হিসেবে পাওয়া যায়। তবে শিশুরা এবং গর্ভবতীরা বাদে বাকি সবাই এই দানা খেতে পারবে। আর হ্যাঁ তোকমা খাওয়ার ক্ষেত্রে পানির সাথে ভালোভাবে মিশছে কিনা সেটা অবশ্যই ভালোভাবে দেখতে হবে। নিয়ম মত খেলে এটি থেকে কোন ধরনের ক্ষতি হবে না ইনশাল্লাহ।
তোকমা খাওয়ার নিয়ম
উপরে আমরা পাঠকদেরকে তোকমা খাওয়ার উপকারিতা এবং তোকমা খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত ভালোভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে। কিন্তু অনেকে আছে যারা তোকমা খাওয়ার নিয়ম ভালো মতো বোঝে না।
এই কারণে এখন আমরা আপনাদেরকে তোকমা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেব।
- তোকমা সাধারণত বীজ বা দানা জাতীয় খাদ্য হয়ে থাকে। এই তোকমা দানাগুলোকে আপনারা পানির সাথে মিশিয়ে সুন্দরভাবে খেতে পারেন।
- এছাড়াও তোকমা দানা গুলোকে পানিতে ভিজিয়ে তারপর যখন এগুলো ফুলে উঠবে বা এগুলোর মধ্যে পানি ঢুকে যাবে তখনও খাওয়া যাবে।
- তোকমা দানা গুলো বাদামের সাথে ব্লেন্ডার করে ও খাওয়া যায় এতে শরীরের অনেক উপকার হয়।
- তোকমা দানা ভালোমতো পিষে নেওয়ার পরে পানির সাথে মিশিয়ে সেখানে দুধ এবং মধু দিয়েও খাওয়া যেতে পারে।
- এগুলো ছাড়াও যদি আপনারা শুধুমাত্র পানির সাথে মিশিয়ে খেতে চান তাও খেতে পারবেন এবং সাথে চিনি দিতে চাইলে সেটাও দিতে পারবেন।
- উপরে বর্ণিত পদ্ধতি গুলো বাদেও আপনারা ইসবগুলের ভুষি এবং পানির সাথে মিশে মিক্সার করে তোকমা বীজ সেবন করতে পারবেন।
এখানে আমরা তোকমা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আপনাদেরকে বেশ কয়েকটি টপিক বলেছি। আপনি যেভাবেই খান না কেন আপনার শরীরের জন্য এই তোকমা বেশ ভালোই কাজ করবে। তবে শুধুমাত্র এটা নিশ্চিত করতে হবে যে এই দানাগুলো ভালোমতো মিশে গেছে কিনা এবং আপনার পেট হজম করতে পারছে কিনা।
পরিশেষে
আজকের পোস্টে আমরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রাকৃতিক খাদ্য তোকমা সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছে। এখানে আমরা পাঠকদের কে তোকমা খাওয়ার অপকারিতা বিশ্লেষণ করে দেওয়ার পাশাপাশি তোকমা খাওয়ার উপকারিতা গুলোও দিয়েছি।
এছাড়াও পাঠকদের কে আমরা তোকমা খাওয়ার নিয়ম গুলো সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিয়েছি যাতে এটা খেতে কোন ধরনের সমস্যা না হয়। এরপরও যদি পাঠকদের মনে তোকমা সম্পর্কিত আরো কোন প্রশ্ন এসে থাকে তাহলে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন।