কাঠ বাদাম এর উপকারিতা

স্বাস্থ্যকর খাবার হিসেবে কাঠ বাদামের জুরি নেই। শিশুদের মস্তিষ্ক গঠনেও খুবই গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখে কাঠ বাদাম। সুস্বাস্থ্যের জন্য অনেকেই খাদ্য তালিকায় রাখে। এমনকি ওজন কমাতে গেলেও কাঠ বাদাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।খাবার হিসেবে কাঠবাদামের জনপ্রিয়তা দিনদিন বেড়েই চলেছে। অবশ্য এর পেছনে যুক্তিসঙ্গত কারণও রয়েছে। এ প্রসঙ্গে ইউনিভার্সিটি অব আলাবামার ডিপার্টমেন্ট অব হিউম্যান নিউট্রিশন অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টের সহযোগী অধ্যাপক ক্রিস্টি ক্রো-হোয়াইট বলেন, কাঠবাদাম হলো একটি ফ্যান্টাসটিক সুপার ফুড, যেখানে ১০ টিরও বেশি ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টস ও মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস রয়েছে। এসব পুষ্টি হার্ট ও রক্তনালীর স্বাস্থ্যকে উন্নত করে। আসুন জেনে নেই কাঠ বাদাম এর উপকারিতা–

কাঠ বাদাম এর উপকারিতা:

কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে:

শরীরে বাজে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় বাদাম। প্রতিদিনের ডায়েটে বাদামের অন্তর্ভুক্ত করলে হার্টের স্বাস্থ্য নিয়ে আর চিন্তায় থাকতে হবে না। আসলে বাদামে উপস্থিত বেশ কিছু কার্যকরী উপাদান শরীরে অন্দরে ভাল কোলেস্টরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই খারাপ কোলেস্টরলের মাত্রা কমতে শুরু করে। এছাড়া বাদামে প্রচুর পরিমাণ মনো-স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, থাকে ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিডও। কিন্তু কোনওরকম ট্রান্স ফ্যাট থাকে না। ফলে হার্ট অ্যাটাক কিংবা স্ট্রোকেরও আশঙ্কা কম থাকে।

হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে:

গবেষণায় দেখা গেছে, বাদামে উপস্থিত ফসফরাস শরীরে প্রবেশ করার পর এমন কিছু কাজ করে যার প্রভাবে হাড়ের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। তাই প্রতিদিন বাদাম খাওয়া শুরু করলে হাড়ের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম থাকবে।

মস্তিস্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়:

আমেরিকার অ্যান্ড্রস ইউনিভার্সিটির গবেষকদের করা এক পরীক্ষায় দেখা গেছে বাদামে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই পরীক্ষার আগে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ম করে বাদাম খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।

পুষ্টির ঘাটতি দূর হয়:

বাদামে রয়েছে প্রায় ৩.৫ গ্রাম ফাইবার, ৬ গ্রাম প্রোটিন, ১৪ গ্রাম ফ্যাট সহ ভিটামিন ই, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন বি২, ফসফরাস এবং ম্যাগনেসিয়াম। এই সবকটি উপাদানই শরীরকে সুস্থ রাখতে বিশেষ প্রয়োজনে লাগে।

ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে:

পুষ্টিবিজ্ঞানীরা বলেন, বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই মৌল। তাই ম্যাগনেসিয়ামের পরিমাণ সঠিক থাকলে ইনসুলিনের সঠিক কার্যকলাপ বজায় থাকে।

ওজন নিয়ন্ত্রণের সহায়ক:

বাদাম খাওয়ার পর ক্ষিদে একেবারে কমে যায়। ফলে মাত্রাতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা হ্রাস পায়। সেই সঙ্গে শরীরে প্রয়োজন অতিরিক্ত ক্যালরি জমে ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনাও কমে। বিপাকের হার বাড়িয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে চিনাবাদাম।

কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়:

বাদামের ফাইবার শরীরের জন্য উপাদেয়। আর্জিনিন এবং হেলদি ফ্যাটের সঙ্গে এই ফাইবারের উপস্থিতি কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ রোগীদের ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি। ফাইবারযুক্ত খাবার খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমে।

কোষের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়:

বাদামে থাকা প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন ই শরীরের প্রতিটি কোণায় ছড়িয়ে থাকা কোষের কর্মক্ষমতার বৃদ্ধি ঘটানোর সঙ্গে সঙ্গে শরীরে যাতে কোনও ক্ষতের সৃষ্টি না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখে। ফলে বয়স বাড়লেও শরীরের উপর এর কোনও প্রভাব পরে না।

হজম ক্ষমতার উন্নতি:

গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত পানিতে ভেজানো বাদাম খেলে দেহের অন্দরে বিশেষ কিছু এনজাইমের ক্ষরণ বেড়ে যায়, যার প্রভাবে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটতে শুরু করে। সেই সঙ্গে গ্যাস-অম্বলের প্রকোপও কমে যায়।

কাঠ বাদামের অপকারিতা:

কাঠ বাদাম এর উপকারিতা পাশাপাশি এর কিছু ক্ষতিকর দিকও আছে চলুন সেগুলো সম্পর্কে জেনে নিই:

আলার্জির উপাদান:

কিছু মানুষের জন্য কাঠ বাদাম আলার্জির উপাদান হতে পারে। এসব মানুষদের জন্য কাঠ বাদাম খাওয়া উচিত নয়। কাঠ বাদাম খেলে তাদের এলার্জি সমস্যা দ্বিগুণ বেড়ে যেতে পারে। এবং তাদের বিভিন্ন সমস্যা বা অসুবিধার উৎপাদন করতে পারে।

গ্যাস হতে পারে:

নিয়মিত কাঠ বাদাম খাওয়ার ফলে আপনার শরীরের মধ্যে কখনো কখনো গ্যাস হতে পারে। তাছাড়া অ্যাসিডিটির সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা:

অতিরিক্ত কাঠ বাদাম খাবেন না অতিরিক্ত কাঠবাদাম খাওয়ার পরে ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

টক্সিকের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে:

বেশি বেশি কাঠবাদাম খাওয়ার ফলে মাঝে মাঝে শরীরের টক্সিকের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।

এন্জাইম সংক্রান্ত সমস্যা:

কিছু মানুষের জন্য কাঠ বাদামে এনজাইম সমস্যা হতে পারে। এর পরিণামে তাদের পাচনা সমস্যা বা সমস্যাগ্রস্থ পাচনাতন্ত্র উত্পন্ন হতে পারে।

সবাই ভাজা বাদাম খেতে পছন্দ করেন কিন্তু পুষ্টিবিজ্ঞানীরা বলছেন ভাজা বাদামের চেয়ে কাঁচা বাদামের পুষ্টিগুণ বেশি। আবার চিকিৎসকরা বলেন, বাদাম খান পানিতে ভিজিয়ে। অন্তত ৮-১০ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখলে বাদামের সম্পূর্ণ পুষ্টিগুণ লাভ করে শরীর।