অনলাইন ইনকাম করার উপায়

ইন্টারনেট মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলছে। মানুষ এখন অনলাইনে অর্থ আয়ের জন্য নানা কৌশল প্রয়োগ করছে। অনলাইনে আয়ের নানা পথও তৈরি হয়েছে। তবে অনলাইনে কাজ করে আয় করতে গেলে কোন প্ল্যাটফর্ম ধরে এগোচ্ছেন, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

ঘরে বসে আয় করা এখন আর অলীক কল্পনা নয়। দিবা-রাত্রির মতো সত্য। কেননা আজকের পৃথিবী ইন্টারনেট কেন্দ্রিক। প্রায় সবকিছুই এখন অনলাইনে করা হচ্ছে। তাই অনলাইনের মাধ্যমে ঘরে বসে আয় করার সুযোগ হয়েছে অবারিত। যা করোনাকালীন সময়ে খুবই বাস্তব আকারে আমাদের সবার সামনে হাজির হয়েছে। এখন ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ ব্যাপারটার সাথে আমরা খুবই পরিচিত। তাই অনায়াসে বলা যায় ঘরে বসে আয় করা এখন খুবই সম্ভব। তবে ঘরে বসে আয় করার উপায় সম্পর্কে সঠিক ধারণার পাশাপাশি নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

ঘরে বসে আয় করার নানা উপায় রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের মাধ্যমেই সফলতা অর্জন সম্ভব। এমন না যে, আজকে শুরু করলাম আর কাল থেকে টাকা আসা শুরু হবে। নানা প্রলোভন ও প্রতারণার ফাঁদ রয়েছে অনলাইনে। তাই সর্তক হয়ে সব কিছু জেনে বুঝে অনলাইনে আয় করার পথ বেছে নিতে হবে। আজকে আমরা ঘরে বসে আয় করার উপায়,অনলাইন ইনকাম করার উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

অনলাইন ইনকাম করার উপায়:

বর্তমানে সবকিছুই অনলাইন প্লাটফর্মে ধাবিত হচ্ছে। তাই অনলাইনে কাজ করে আয় করার প্রচুর সুযোগ রয়েছে। আর এই কাজ ঘরে বসে করা সম্ভব। ঘরে বসে আয় করা নিশ্চিত উপায় রয়েছে। প্রয়োজন শুধু কাজের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষতা অর্জন। অনলাইন ইনকাম করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।

মার্কেটপ্লেসে ফ্রিল্যান্সিং করে আয়:

ঘরে বসে আয় করার জন্য প্রথমেই আপনাকে ঘরে বসে কোন ধরনের সার্ভিস প্রদান করা যায় তা জানতে হবে। তার পরে আপনাকে জানতে হবে কোথায় আপনি সার্ভিস প্রদান করে আয় করতে পারবেন। ঘরে বসে আয় করার অন্যতম প্রধান উপায় হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং। যা অনলাইন মার্কেটপ্লেস এর মাধ্যমে হয়ে থাকে।বর্তমানে আপওয়ার্ক, ফাইভার, ফ্রিল্যান্সার ডট কম, পিপল পার আওয়ার ইত্যাদি মার্কেটপ্লেসে কাজের ব্যবস্থা রয়েছে। এইসব মার্কেট প্লেসে আপনি ঘণ্টা হিসেবে অথবা গিগ সাার্ভিস প্রদানের মাধ্যমে আপনার কাজের দাম নির্ধারণ করতে পারেন। যে কোন প্রজেক্ট অথবা গিগ এ বর্ণিত সার্ভিস প্রদানের পর বায়ার যদি কাজের অনুমোদন দেয় তবেই আপনি আয় নিশ্চিত করতে পারবেন। ফ্রিল্যান্সিং এর পুরো সার্ভিস আপনি ঘরে বসে দিতে পারবেন। বিভিন্ন অনলাইন পেমেন্ট ও ব্যাংক এর মাধ্যমে আপনার আয় আনতে পারবেন।

ব্লগিং করে আয়:

অনেকে শখ করে অনেক বিষয়ে লেখেন। কিন্তু শখের বিষয়টি যদি পেশাগত কাজে লাগাতে পারেন, তবে অনলাইনে আয় করতে পারবেন। ব্লগিং করেও আয় করার সুযোগ আছে। দুই উপায়ে ব্লগ থেকে আয় করা যায়। একটি হচ্ছে নিজের ব্লগ সাইট তৈরি। ওয়ার্ডপ্রেস বা টাম্বলার প্ল্যাটফর্মে বিনা মূল্যে ব্লগ শুরু করতে পারেন। আবার চাইলে নিজে ডোমেইন হোস্টিং কিনে ব্লগ চালু করতে পারেন। তবে নিজে ব্লগ চালু করতে গেলে কিছু বিনিয়োগ করার দরকার হবে। ডোমেইন, হোস্টিং কিনতে হবে। নিজের ব্লগ শুরু করাটাই ভালো। কারণ, এতে নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী অনেক পরিবর্তন করার সুযোগ আছে। বিজ্ঞাপন, ফেসবুকের ইনস্ট্যান্ট আর্টিকেল, পণ্যের পর্যালোচনা প্রভৃতি নানা উপায়ে ব্লগ থেকে আয় করতে পারেন। তবে ব্লগ লিখে আয় করতে গেলে রাতারাতি আয় আসবে না। এ জন্য প্রচুর সময় ও ধৈর্য থাকতে হবে। অনেকের ব্লগ থেকে আয় করতে কয়েক বছর পর্যন্ত লেগে যায়। ব্লগে নিয়মিত কনটেন্ট আপডেটসহ তা সক্রিয় রাখতে কাজ করে যেতে হয়।

গুগল অ্যাডসেন্স থেকে আয়:

অনলাইন থেকে আয় করার নিশ্চিত উপায় এর একটি হলো গুগল অ্যাডসেন্স থেকে আয়। আপনার ওয়েবসাইট অথবা ব্লগ এ নির্ধারিত স্থানে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আয় করা যায়। গুগল অ্যাডসেন্স এর মাধ্যমে আপনার ওয়েবসাইট এ বিজ্ঞাপন দেখানো হবে। ব্যবহারকারীরা বিজ্ঞাপনে ক্লিক করলে আপনি গুগল থেকে টাকা পাবেন। অনলাইনের মাধ্যমে ঘরে বসে আয়ের সবচেয়ে নিরাপদ ও সহজ হলো গুগল অ্যাডসেন্স এর মাধ্যমে টাকা আয়। আপনি পৃথিবীর যে কোন স্থানে থাকেন না কেন নিয়মিত আপনার সাইটে ভিজিটর বাড়ানোর মাধ্যমে আপনার আয় বৃদ্ধি করতে পারেন।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয়:

এই পদ্ধতিতে আয়ের ক্ষেত্রেও নিজের ওয়েবপেজ বা ব্লগ প্রয়োজন। যখন ওয়েবসাইট বা ব্লগ চালু হবে, তখন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের লিংক তাতে যুক্ত করতে পারবেন। যখন আপনার সাইট থেকে ওই প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা সেবা কোনো দর্শক কিনবেন, তখনই আপনার আয় আসতে শুরু করবে।

ভার্চুয়াল অ্যাসিস্টেন্ট:

এখন ভার্চ্যুয়াল সহকারীদের কাজের ক্ষেত্র বেড়েছে। ঘণ্টাপ্রতি আয়ও বেশি। বাড়ি থেকে করপোরেট অফিসের নানা কাজ অনলাইনে করে দেওয়ার সুবিধা আছে এখন। ভার্চ্যুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কর্মী বা নিজের ব্যবসা নিজেই চালানো যায়। বিভিন্ন দক্ষতার ভিত্তিতে ভার্চ্যুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট নিয়োগ দেয় প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ফোন কল, ই-মেইল যোগাযোগ, ইন্টারনাল রিসার্চ, ডেটা এন্ট্রি, এডিটিং, রাইটিং, ব্লগ, গ্রাফিকস, টেক সাপোর্ট, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবস্থাপনার মতো কাজ থাকে। ২৪ / ৭ ভার্চ্যুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট, অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যাচ, ফ্রিল্যান্সার ডটকম, পিপল পার আওয়ার, আপওয়ার্কের মতো সাইটগুলোতে কাজ পাওয়া যায়।

ইউটিউব থেকে আয়:

যাঁরা ব্লগ লিখে আয় করতে স্বচ্ছন্দ নন, তাঁরা ক্যামেরার সাহায্য নিয়ে ভিডিও থেকে আয় করতে পারেন। এ জন্য অবশ্য সৃজনশীল আর ভালো সম্পাদনা জানতে হবে। নিজের ইউটিউব চ্যানেল খুলে তাতে ভিডিও আপলোড করে সেখান থেকে আয় করতে পারেন। আপনার চ্যানেল কোন ক্যাটাগরির এবং তাতে কোন ধরনের ভিডিও রাখবেন, তা আগেই ঠিক করে রাখুন। যে বিষয়ে মানুষের আগ্রহ বেশি, সেই বিষয়ে ভিডিও না রাখলে মানুষ তা দেখবে না। ভিডিও না দেখলে আয় হবে না। বিষয়টি অনেকটাই ব্লগের মতো। তবে এ ক্ষেত্রে কনটেন্ট হচ্ছে ভিডিও। চ্যানেলের সাবসক্রাইবার ও ভিডিও দেখার সময় বাড়লে আয়ের সম্ভাবনা বাড়বে। প্রতি হাজার ভিউয়ের হিসাবে গুগল থেকে অর্থ পাবেন।

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করে আয়:

বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর মাধ্যমে আয়ের নানা উপায় রয়েছে। ফেসবুক, টুইটার, পিন্টারেস্ট, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদি মাধ্যম ব্যবহার করে আয় করা যাচ্ছে। আর সোশ্যাল মিডিয়া মার্কের্টিং এর কাজ ঘরে বসে করা যায়। আপনার সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে নানাভাবে মার্কেটিং করা যায়। আপনার পেজ এর যদি ফলোয়ার বেশি হয় যে কোন কোম্পানির পণ্যের প্রচারণার মাধ্যমে টাকা আয় করতে পারেন। পাশাপাশি আপনার পেজ বিক্রির মাধ্যমে টাকা আয় করতে পারে। ঘরে বসেই আপনি সোশ্যাল মিডিয়ার ম্যাধ্যমে আয় করতে পারেন। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে সোস্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর সবচেয়ে অন্যতম মাধ্যম হল ফেসবুক। আপনি যদি চান শুধু মাত্র ফেসবুক মার্কেটিং শিখেই ঘরে বসে অনলাইনে ইনকাম শুরু করে দিতে পারেন।

কন্টেন্ট রাইটার/ আর্টিকেল লিখে আয় করুন:

যাঁরা লেখালেখিতে ভালো এবং একাধিক ভাষায় সাবলীল লিখতে পারেন, তাঁদের কাজের জন্য বসে থাকতে হয় না। অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে কাজ করে বা লিখে দক্ষতা অর্জন করতে পারেন। আর্টিকেল লেখার মানের ওপর ভিত্তি করে আয় আসে। কাজদাতা নির্দিষ্ট নীতি মেনে লেখার জন্য বলতে পারেন। নির্দিষ্ট বিষয় বা নিশ ধরে নিজের দক্ষতা বাড়াতে পারলে আয়ের ধারা বেড়ে যায়। বর্তমান সময়ে অনলাইন সেক্টরে প্রচুর কন্টেন্ট রাইটার এর চাহিদা রয়েছে। অনলাইন মাধ্যমে যারা আয় করতে আগ্রহী তারা ওয়েবসাইট অথবা পণ্য সম্পর্কে নানা কন্টেন্ট বানিয়ে থাকে। তাই ঘরে বসে আপনি কন্টেন্ট লেখার মাধ্যমে আয় করতে পারেন। আপনার লেখার মান অনুযায়ী আপনি কন্টেন্ট এর দাম নির্ধারণ করতে পারবেন। তাই অল্প সময়ে অধিক আয় করার সুযোগ রয়েছে শুধুমাত্র কন্টেন্ট রাইটিং এর মাধ্যমে। পাশাপাশি আপনি যদি কোন সাইট বানিয়ে আয় করতে চান তখন আপনাকে আর টাকা দিয়ে কন্টেন্ট রাইটার নিয়োগ দিতে হবে না। বরং আপনি নিজেই নিজের সাইটের কন্টেন্ট তৈরি করতে পারবেন।

ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে আয় করুন ঘরে বসে:

আপনি নিজের ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে ঘরে বসে আয় করতে পারেন। প্রথমে আপনি নিজস্ব একটি ওয়েবসাইট তৈরি করবেন। ওয়েবসাইট এর ডোমেইন নেম নির্বাচন, হোস্টিং, থিম ইত্যাদি আপনি নিজের মতো করে সাজাতে পারেন। তারপর আপনি বিভিন্ন টপিক সিলেক্ট করে আর্টিকেল পাবলিশ করবেন। এর মাধ্যমে আপনার ওয়েবসাইট এ ভিজিটর বাড়তে থাকবে। তার পরের ধাপে আপনি গুগল অ্যাডসেন্স এর জন্য আবেদন করবেন। গুগলের বিজ্ঞাপনের অনুমোদনের পর আপনার ওয়েবসাইটে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন দেখানো শুরু করবে গুগল। আপনার সাইটের ভিজিটদের বিজ্ঞাপনে ক্লিক থেকে আপনি আয় করতে পারেন।

গ্রাফিকস ডিজাইন করে অনলাইনে আয়:

অনলাইনে ঘরে বসে আয়ের ক্ষেত্রে গ্রাফিকস ডিজাইন ভালো উপায়। যাঁরা এই কাজে দক্ষ, তাঁরা বিভিন্ন ডিজাইন অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোতে দিয়ে রাখেন। সেখান থেকে তাঁদের আয় আসে। তাঁদের তৈরি একটি পণ্য অনেকবার বিক্রি হয়, অর্থাৎ একটি ভালো নকশা থেকেই দীর্ঘদিন পর্যন্ত আয় হতে থাকে। অনলাইনে এ ধরনের অনেক ওয়েবসাইটে গ্রাফিকসের কাজ বিক্রি করা যায়। এ ছাড়া অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোতেও গ্রাফিকস ডিজাইনারদের অনেক চাহিদা রয়েছে।

উপসংহার:

এছাড়া পিটিসি, ডেটা এন্ট্রি, অনলাইন টিউটর, অনুবাদ ইত্যাদি সার্ভিস প্রদান করে ঘরে বসে অনলাইনে ইনকাম করতে পারেন। সকল মার্কেটপ্লেসে এইসব কাজের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। যা আপনি অনলাইনের মাধ্যমে ঘরে বসেই প্রদান করতে পারেন। অনলাইন থেকে ইনকাম এখন আর স্বপ্ন নয় বাস্তবতা। দরকার শুধু দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি সঠিক পথ বেচে নেয়া। তাই আর দেরি না করে আপনার পছন্দের বিষয় নিয়ে কাজ শুরু করে দেন এখনই। আর অনলাইন থেকে আয় করুন।