নগদ একাউন্ট কিভাবে খোলা যায়

নগদ একাউন্ট খোলার নিয়ম , দুনিয়া যতই ডিজিটাল হচ্ছে কাগজের টাকার ব্যবহার দিন দিন ততই কমে আসছে। বাংলাদেশ ঠিক এর ব্যতিক্রম নয়, তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে আমাদের দেশেও ডিজিটাল টাকা লেনদেন সম্বভ হচ্ছে। আমাদের দেশে এই সেবা বিভিন্ন ডিজিটাল প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সম্পন্ন হচ্ছে তারমধ্যে অন্যতম হল নগদ মোবাইল ব্যাংকিং সেবা।বাংলাদেশ সরকারের ডাক বিভাগের আওতায় একটি ডিজিটাল আর্থিক সেবার নাম হচ্ছে নগদ মোবাইল ব্যাংকিং।

২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে নগদ নামে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের অধীনে একটি নতুন মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান যাত্রা শুরু হয়, যা বর্তমানে বিকাশের পর সবচেয়ে জনপ্রিয়তা মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা। এর সেবা ও জনপ্রিয়তা বিকাশ এর মতই দ্রুত বেড়ে চলেছে সারা বাংলাদেশে।বর্তমান সময়ে টেলিভিশনের পর্দায়, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ব্যানার ফেস্টুনে অথবা যেকোনো অনলাইন ওয়েবসাইটে ঢুকলে নগদের অ্যাড দেখা যায়। চমকপ্রদ নতুন নতুন অফার ও মোবাইল রিচার্জে বিশেষ ছাড় নিয়ে গ্রাহকদের আকর্ষণ করে চলেছে নগদ।

তাই মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ব্যবহারকারী গ্রাহকের কৌতূহল জাগে নগদ একাউন্ট খোলার পদ্ধতি সম্পর্কে। তবে অনেকেই জানে না নগদ একাউন্ট খোলার কিছু সহজ মাধ্যম রয়েছে। এই মাধ্যম গুলো সম্পর্কে জানা থাকলে আপনি খুব সহজেই নগত একাউন্ট খুলতে পারবেন। আজকের এই আর্টিকেলে কিভাবে খুব সহজে নগদ একাউন্ট খোলা যায় এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। চলুন দেখে নেই নগদ একাউন্ট খোলার নিয়ম:

নগদ একাউন্ট খোলার তিনটি পদ্ধতি রয়েছে

১) নগদ একাউন্ট খোলার ইউএসএসডি পদ্ধতি। *১৬৭ ডায়াল করে।

২) মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে নগদ একাউন্ট খোলা

৩) নগদ উদ্যোক্তা পয়েন্টে অথবা কাস্টমার সার্ভিস পয়েন্ট থেকে নগদ একাউন্ট খোলা।

নগদ একাউন্ট খুলতে যা প্রয়োজন হবে

১)একটি মোবাইল ফোন

২) একটি নিবন্ধিত সচল সিম

৩) ন্যাশনাল আইডি কার্ড

৪) নগদ মোবাইল অ্যাপ

৫) পাসপোর্ট সাইজের দুই কপি ছবি

এক্ষেত্রে একেকটি উপায়ে একেকটি জিনিসের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। যা নিচে বিস্তারিত আলোচনায় বুঝতে পারবেন।

নগদ একাউন্ট খোলার ইউএসএসডি পদ্ধতি

১) প্রথমে আপনার মোবাইল ফোনের ডায়াল প্যাডে গিয়ে *১৬৭# ডায়াল করতে হবে।

২) নগদ পিন সেট করুন: এরপর আপনাকে ৪ ডিজিটের পিন সেট করে দিতে হবে । পিন সেট করার ক্ষেত্রে মনে রাখবেন এমন পিন দিবেন যা আপনি মনে রাখতে পারেন। এবং একাউন্টের পিন অবশ্যই কারো সাথে শেয়ার করবেন না।

৩) পিন কনফার্ম করুন: পুণরায় কনফার্ম পিন চাইলে পূর্বে যে ৪ ডিজিটের পিন দিয়েছিলেন,সেই ৪ ডিজিটের পিন আবারো লিখে দিন।

অ্যাপ দিয়ে নগদ একাউন্ট খোলার নিয়ম

অ্যাপ দিয়ে নগদ একাউন্ট খোলা একটি স্মার্ট পদ্ধতি। আপনি চাইলে ঘরে বসে অ্যাপের মাধ্যমে নগদ  একাউন্ট খুলতে পারেন। চলুন অ্যাপ দিয়ে নগদ একাউন্ট খোলার ধাপ গুলো জেনে নিই:

১) নগদ অ্যাপ ডাউনলোড

অ্যাপ দিয়ে নগদ একাউন্ট খুলতে প্রথমে আপনাকে মোবাইল ফোনের প্লে-স্টোর অথবা অ্যাপল স্টোরে যেতে হবে। তারপর, Nagad লিখে সার্চ করলেই একদম প্রথমেই নগদের অফিসিয়াল নগদ অ্যাপ চলে আসবে। এবার নগদ অ্যাপ ইনস্টল করে নিন।

২)নগদ অ্যাপ রেজিস্ট্রেশন

নগদ অ্যাপ ইনস্টল করার পর নগদ অ্যাপটি ওপেন করুন। ওপেন করার পর রেজিস্ট্রেশন করুন অপশনটিতে ক্লিক করুন।

৩) নগদ একাউন্ট নাম্বার দিন

এখন আপনি  যেই নাম্বার দিয়ে নগদ একাউন্ট খুলতে চাচ্ছেন সেই নাম্বারটি লিখে পরবর্তী বাটনটিতে ক্লিক করুন।

৪) অপারেটর সিলেক্ট করুন

আপনার সিমটি যেই অপারেটরে (গ্রামীনফোন, রবি, বাংলালিংক, টেলিটক) সিলেক্ট করুন অর্থাৎ আপনার সিম বাংলালিংক হলে বাংলালিংক সিলেক্ট করুন।

৫) KYC তথ্য দিন

এবার আসবে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেপ, এখানে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের ছবি তুলতে হবে। প্রথমে আপনার আইডি কার্ডের সামনের এবং পরের ধাপে পেছনের অংশের ছবি তুলবেন। এবং পরবর্তীতে বাটনটিতে ক্লিক করন।

৬) নিজের ছবি তুলুন

এই ধাপে এসে আপনাকে নতুন আরেকটি ডায়ালগ বক্সে নিয়ে যাবে সেখানে আপনার নিজের ছবি তুলতে হবে। ছবি তোলার সময় আপনার চারপাশে যেন আলো থাকে, আপনার মুখমন্ডল যেন স্পষ্ট দেখা যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ছবি তোলার জন্য ক্যামেরার সোজাসুজি তাকান ছবি তোলার সময় কয়েকবার চোখের পলক ফেলুন। সফলভাবে ছবি তোলা হলে পরবর্তী ধাপে ক্লিক করুন।

৭) নগদ পিন সেট করুন

এবার আপনাকে প্রাথমিক পিন সেটআপ করতে বলা হবে  আপনি আপনার পছন্দমতো মনে রাখতে পারবেন এমন ৪ ডিজিটের পিন নাম্বার দিন। এরপর পরবর্তীতে ক্লিক করলে কনফার্ম পিন দিতে বলবে আপনি প্রথমে যে ৪ ডিজিটের পিন নাম্বার দিয়েছিলেন সেইম পিন আবার দিবেনপিন বসানো শেষ পরবর্তী ধাপে ক্লিক করুন।

৮) নগদ একাউন্ট ভেরিফিকেশন

এবার নগদ থেকে আপনার একাউন্ট ভেরিফিকেশনের জন্য একটি ওটিপি (কোড মেসেজ) সেন্ড করা হবে। যেই কোডটি আসবে আপনি ওটিপির ঘরে সঠিকভাবে কোড পূরণ করুন।সবকিছু ঠিকঠাকভাবে সফলভাবে কমপ্লিট করা হলে আপনার একাউন্ট খোলা হয়ে যাবে।

নগদ উদ্যোক্তা পয়েন্ট থেকে নগদ একাউন্ট খোলার নিয়মনগদ উদ্যোক্তা পয়েন্টে থেকে নগদ একাউন্ট খুলতে  যা যা প্রয়োজন:

১) ভোটার আইডি কার্ড

২)পাসপোর্ট সাইজের দুই কপি ছবি

৩যে সিম দিয়ে একাউন্ট খুলবেন সেই সিম

৪)আপনার মোবাইল ফোন

নগদ উদ্যোক্তা পয়েন্টে যাওয়ার পর আপনাকে একটি ফর্ম দেওয়া হবে, সেই ফর্মটি পূরণ করার পর নগদ উদ্যোক্তা আপনার নগদ মোবাইল একাউন্ট ওপেন করে দিবে। এরপর ৫০ টাকা ক্যাশইন করলেই আপনার নগদ একাউন্টটি অ্যাক্টিভ হয়ে যাবে। ব্যস, তৈরি হয়ে গেলো আপনার নগদ একাউন্ট।

নগদ একাউন্ট দেখার নিয়ম

আপনার মোবাইল ফোনের ডালপ্যাড থেকে  *১৬৭# ডায়াল করে নগদ একাউন্ট দেখতে পারেন।

নিয়মাবলী:

১)*১৬৭# ডায়াল করুন

২) এরপর ৭ লিখে Send করন‌ এবং My Nagad অপশনে প্রবেশ করুন

৩)১ লিখে send করে Balance Inquiry অপশনে প্রবেশ করুন

৪) এবার একাউন্টের পিন নাম্বারের অপশন আসবে আপনার নগদ একাউন্টের পিন কোড দিয়ে send করুন।

৫) এবার ফোনের স্ক্রিনে আপনার নগদ একাউন্টে ব্যালেন্স দেখতে পাবেন।

অ্যাপের মাধ্যমে নগদ একাউন্টে প্রবেশের নিয়ম

অ্যাপ থেকে নগদ খুব সহজেই একাউন্ট ব্যালেন্স দেখা ও অন্যান্য কাজ করার সুযোগ রয়েছে।

১)নগদ অ্যাপটি ইন্সটল করুন ও অ্যাপটিতে প্রবেশ করুন

২)একাউন্ট নাম্বার, ওটিপি ও সঠিক পিন দিয়ে অ্যাপে লগিন করুন

৩)এরপর ভাষা বাংলা হলে “ব্যালেন্স জানতে ট্যাপ করুন” ও ভাষা ইংরেজি হলে “Tap for Balance”  বাটন চাপুন

৪)এরপর আপনার নগদ একাউন্ট এর ব্যালেন্স দেখতে পাবেন।

নগদ একাউন্টের সুবিধা 

১) নগদে  সম্পূর্ণ‌ ফ্রি একাউন্ট খুলতে পারবেন।

২) স্মার্টফোন এবং বাটন ফোনেও নগদ একাউন্ট খুলা যায়।

৩) নগদ থেকে অন্য নগদ একাউন্টে সেন্ড মানি করতে কোনো অতিরিক্ত টাকা খরচ হয় না। অর্থাৎ (Send money সম্পুর্ণ ফ্রি)

৪)নগদ একাউন্টে ক্যাশ ইন ফ্রি-তে করতে পারবেন।

৫) নগদে ক্যাশ আউট চার্জ মাত্র ৯.৯৯ টাকা। যা বাংলাদেশের অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিং এর তুলনায় অনেক কম।

৬) নগদ একাউন্ট থেকে গ্রামীন, রবি, বাংলালিংক, এয়ারটেল, টেলিটকে মোবাইল রিচার্জ করার অনেক সুবিধা রয়েছে।

৭) নগদে একাউন্ট থেকে বিভিন্ন ধরনের মোবাইল রিচার্জ অফার পাওয়া যায়।

৮) নগদে একাউন্টের মাধ্যমে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির বিল পরিশোধ করতে পারবেন।

সবশেষে 

বাংলাদেশের যত মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রতিষ্ঠান রয়েছে আছে তার মধ্যে নগদ বাংলাদেশ ডাক বিভাগের একটি সরকারী সেবা হওয়ার কারনে, ডাক বিভাগের নগদ একাউন্ট এ লেনদেন করাটা অন্যান্য সেবার চেয়ে অধিক নিরাপদ হবে। এছাড়াও অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিং সেবার চাইতে নগদ একাউন্ট থেকে টাকা তোলার চার্জ তুলনামূলক অনেক কম ।আপনারা চাইলে কোন প্রকার ভয় ছাড়া নগদের যে কোন সেবা গ্রহণ করতে পারেন। নগদ একাউন্টের পিন নাম্বার ও ভেরিফিকেশন কোড কখনো কারো সাথে শেয়ার করবেন না। এবং সব সময় প্রতারক চক্র থেকে দূরে থাকুন। এবং যেকোন সেবা পেতে নগদ কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করুন। আশা করি আজকের আর্টিকেলটি থেকে আপনি কিছুটা হলে উপকৃত হয়েছেন। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।